হিন্দু সংস্কৃতি



•••দশবিধ সংস্কার•••

মনুসংহিতা, যাজ্ঞবাল্ক সংহিতা পরাশর সংহিতা, প্রভূতি স্মৃতিশাস্ত্রে দশকর্মের বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে 

গর্ভাধান - 
পিতা-মাতার দেহে মনে যেসব দোষ- গুণ থাকে সেগুলো সন্তানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়এটা দেখে আর্য- ঋষিগণ গর্ভাধান বিধি প্রবর্তন করেছেন শুভলগ্নে সন্তানের জন্মদানের জন্য যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান তাকে গর্ভাধান 

পুংসবন- 
পুত্র সন্তানের কামনায় যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে পুংসবন বলে 

সীমন্তোন্নয়ন- 
গর্ভাবস্থার অন্যতম সংস্কার সীমন্তোন্নয়নগর্ভধারনের পর চতুর্থ, ষষ্ঠ বা অষ্টম মাসে এই সংস্কার করা হয় 

জাতকর্ম- 
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র সংস্কার করতে হয় সংস্কার কার্য হল-পিতা প্রথমত পুত্রকে স্বর্ণ দিয়ে পুত্রের মুখে মধু ঘৃত দেন এবং তার সাথে মন্ত্রোচ্চারণ করেন 

নামকরণ- 
সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার দশম,একাদশ, দ্বাদশ বা শততম দিবসে নামকরণ করতে হয়শৈশব সংস্কারের প্রথম সংস্কার সন্তানের নাম রাখার অনুষ্ঠানই নামকরণ সংস্কার

অন্নপ্রাশন- 
পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যষ্ঠ অষ্টম মাসে এবং কন্যা সন্তানের জন্ম থেকে পঞ্চম বা সপ্তম মাসে প্রথম ভোজন করার জন্য যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয় তাকে অন্নপ্রাশন বলে

চূড়াকরণ- 
গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তকে যে কেশ উৎপন্ন হয়, তা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানসহ মুণ্ডনের নাম চূড়াকরণ

উপনয়ন- 
উপনয়ণ সংস্কারে বিদ্যা শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে প্রথম গুরুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়উপনয়নশব্দটির মানেই নিকটে নিয়ে যাওয়া প্রচলিত একটি অর্থে উপনয়ন বলতে বোঝায় যজ্ঞপৌত বা পৈতা ধারণ

সমাবর্তন- 
অধ্যায়ন শেষে গুরু কর্তৃক শিষ্যকে গৃহে ফেরার অনুমতি প্রদান উৎসবকে সমাবর্তন বলেউপনয়ন শেষে গুরুগৃহে বাস করাই ছিল রীতিসেখানে পড়াশুনা শেষ করে গুরুর অনুমতি নিয়ে গৃহে প্রত্যাগমন করতে হতবর্তমান কালে সাধারণত গুরুগৃহে থেকে বিদ্যা বিদ্যাশিক্ষার প্রচলন নেই সে কারণে সংস্কারটি এখন পালিত হয় না তবে বর্তমানেসমাবর্তননামটি আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র বিতরণ উৎসব এখন সমাবর্তন উৎসব নামে উদযাপিত হয় যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের উপাধি পত্র প্রদান উৎসবই পূর্বকালের গুরুগৃহ ত্যাগের উৎসব বলে মনে করা যেতে পারে

বিবাহ- 
যৌবন অবস্থার সংস্কার বিবাহ সংস্কার বিবাহ বিবাহের দ্বারা পুরুষ সন্তানের পিতা হন নারী হন মাতা বিবাহের মাধ্যমে পিতা, মাতা, পুত্র কন্যা প্রভূতি নিয়ে গড়ে ওঠে একটি পরিবার পরিবারে সকলে মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগ ভোগ করে জীবন-যাপন করে বিবাহে যেমন কতকগুলো শাস্ত্রীয়বিধি বিধান পালিত হয়, তেমনি পালিত হয় কতগুলো লৌকিক স্থানীয় স্ত্রী- আচার

বিবাহ উচ্চারণ করা হয় :-
যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।। 

অর্থাৎ যদ্যেত=যেখানে
হৃদয়ং=হৃদয়
তব=তোমার
তদস্তু=সেখানে
হৃদয়ং=হৃদয়
মম=আমার
যদিদং=যেখানে
হৃদয়ং=হৃদয়
মম=আমার
তদস্তু=সেখানে
হৃদয়ং=হৃদয়
তব=তোমার  

মন্ত্রের মধ্য দিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গভীর ঐক্য গড়ে ওঠে মনুসিংহতায় সেকালের অবস্থা অনুসারে রকমের বিবাহ- পদ্ধতির বর্ণনা আছে যথা- ব্রাহ্ম, দৈব্য, আর্ষ, প্রজাপাত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস পৈশাচ কন্যাকে বিশেষ বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদন করে স্বর্ণ অলংকার ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত করে বিদ্বান সদাচর সম্পন্ন বরকে স্বয়ং আমন্ত্রন করে যে কন্যা দান করা হয় তাকে ব্রাহ্মবিবাহ বলে 

তোমরা উভয়ে সুখে গার্হস্থ্য ধর্মের আচরণ কর”- এই আর্শীবাদ করে যথাবিধি অলংকার ইত্যাদি দ্বারা অর্চনাপূর্বক বরকে যে কন্যা দান করা হয় তাকে প্রজাপত্য বিবাহ বলেবিবাহের নানা প্রকার পদ্ধতি সেকালের সামাজিক প্রথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয় বিবাহ-পদ্ধতি সমূহের মধ্যে ব্রাহ্ম বিবাহ পদ্ধতিটিই শ্রেষ্ঠ


(
সংগৃহীত এবং সংকলিত) রথ যাত্রা পেজ হতে 









উপনিষদ গঙ্গা


সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ।
যেনাক্রমন্তৃষ্যো হ্যাপ্তকামা যত্র তত্‍ সত্যস্য পরমং নিধানম্।।

মুন্ডকোপনিষদ ৩.১.৬

সত্যের জয় এবং অসত্যের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। সত্যের মাধ্যমেই সেই পবিত্র পথ প্রসারিত যার মাধ্যমে ঋষিগন সেই পরমসত্যের নিকট গমন করেন!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন