শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২

শিশু পরাগ মন্ডলের অপহরন, উদ্ধার ও বিছিন্ন কিছু ভাবনা

কেরানীগঞ্জের স্কুলছাত্র পরাগ মণ্ডলকে অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে আটকদের মধ্যে তিন জন এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরা হলেন, জাহিদুল হাসান (১৮), কালা চান (৩৫) ও মো. আলী ওরফে রিফাত (১৯)। শুক্রবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী শহীদুল ইসলাম নিজের খাসকামরায় এই তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন ব
লে জানান ওই আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।
এ ঘটনায় র‌্যাবের হাতে আটক বাকি তিনজন মো. আলফাজ (১৮), রিজভী আহমেদ অনিক (১৮) ও আবুল কাশেমকে (৩৩) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
পরাগকে অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় জনকেই ১০ দিনের হেফাজতে নেয়ার আবেদন করলে ওই তিনজনের ১০ দিন হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক কাজী শহীদুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর জাহিদুল, কালা চান ও রিফাতকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় আগে থেকেই পুলিশ হেফাজতে থাকা মামুনও অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার মামুনকে সাত দিনের হেফাজতে নেয়ার আদেশ দেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. তাজুল ইসলাম।
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকা থাকে অপহরণের তিনদিন পর মঙ্গলবার রাতে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র পরাগ মণ্ডলকে (৬) উদ্ধার করা হয়। পরদিন বুধবার রাতে এই অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে মামুনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। সে রাতেই এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জুরাইনের একটি বাড়ি থেকে ওই ছয় জনকে আটক করে র‌্যাব। ********

@@@@@@@@ @@@@ উপরের এ অংশটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম- এর সৌজন্যে পাওয়া। পরাগ মন্ডল নামে এ শিশুটি কেরানীগঞ্জের সংখ্যা লগু হিন্দু পরিবারের বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। প্রকাশ্য দিবালোকে মা, বোন ও গাড়ীর ড্রাইভারকে গুলি করে মায়ের বুক হতে শিশুপুত্র ছিনতাই পত্র পত্রিকা ও টিভি সংবাদে কভার পাওয়া সম্ভবতঃ এটি দেশের প্রথম ঘটনা। এ ঘটনায় দেশের সুস্থ চিন্তার ধারক আপামর সকল মানুষ ব্যথিত হয়েছে, উৎকন্ঠিত হয়েছেন শিশুটির ভাগ্য নিয়ে। দেশের প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। পরিশেষে তিন দিন পর শিশুটি উদ্ধার পাওয়ায় স্বস্ত্বির নিশ্বাস নিয়েছেন উৎকন্ঠিত মানুষজন।

এ শিশুটি অপহরন ও উদ্ধার পর্যন্ত ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রায় সকল পত্র পত্রিকায় নানান ধরনের খবর ছাড়াও ঢাকা শহরে সুস্থ ও বিবেকবান মানুষের মনে নানান প্রশ্নে জন্ম দিয়েছে। কেহ কেহ মন্তব্য করেছেন এটির পেছনে সরকার দলীয় স্থানীয় কোন কোন পাতি নেতা জড়িত, আবার কেহ কেহ মন্তব্য করেছেন সংখ্যালগু এ পরিবারটিকে উচ্ছেদ করার প্রয়াসে এটি ঘটানো হয়েছে। বিরোধীদল বলেছেন, এঘটনা প্রমান করে সরকার সংখ্যালগুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিগত বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ন্যায় আল্লার মাল আল্লায় নিয়েছেন বলবেন না, বরং তিনি বলবেন এটি একটি বিছিন্ন ঘটনা ইত্যাদি ইত্যাদি। বিরোধী দলের কে কি বলেছেন সেটি সাধারণ্যের মধ্যে তেমন ধার না ধারলেও ক্ষমতাসীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কখন কি বলেছেন, এটি জনসাধারন্যের মধ্যে একটু না একটু আলোচনায় আসবে এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় ক্ষমতাসীন সরকারের বিজ্ঞ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এহেন কথা না বলে বরং এটি দুঃস্কৃতিকারীদের ঘটনা এবং দুঃস্কৃতিকারী যেই হোক এদের শাস্তির বিধান সরকার করবেই এধরনে প্রত্যয় দেখিয়ে বলে ক্ষান্ত হতে পারতেন।

শিশু পরাগ মন্ডল কি কারণে অপহরণ হলো এবং কিভাবে উদ্ধার হলো এ বিষয়ে চুলচেরা তদারকি করার জন্য সরবারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। কিন্তু ঘটনাটি যে, শিশু পরাগ মন্ডলের বাবা তথা একটি সংখ্যালগু পরিবারকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ঘটনানো হয়েছে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ একমত হবেন বলে আশা করা যায়। আমরা যদি সেই ১৯৪৭ সাল হতে অদ্যাবধি বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের হিন্দু পরিবারগুলির জায়গা জমি, বসত ভিটে উচ্ছেদের ধরন গুলি একটু খেয়াল করি, তাহলে দেখব ঐ ধরনের ঘটনা গুলির সাথে শিশু পরাগের অপহরনের ঘটনার একটা সামঞ্জস্য/ মিল আছে। গ্রামগঞ্জের হিন্দু পরিবার গুলিকে স্থাবর সম্পত্তি হতে উচ্ছেদের পূর্বে উচ্ছেদকারীরা প্রথমে পরিবারের দুর্বল জায়গাটা খোঁজে এবং ঐ দূবল জায়গায় আঘাত করে পরিবারের প্রধানকর্তা সহ সবার মনে ভয় ধরিয়ে দেয়, যেন তারা সবাই তাদের জন্মভূমিতে অনিরাপদ মনে করেন। এক্ষেত্রে গ্রামে গঞ্জে সংখ্যালগু পরিবারের উঠতি/যুবতী মেয়েদেরকে বেচে নেয়। গ্রামের নিরীহ মানুষ সাধারণতঃ নিজের জীবনের চাইতে সম্ভ্রমকে বেশী গুরুত্ব দেয়। সুতরাং পরিবারের মান মর্যাদা রক্ষার তাগিদে সংখ্যালগু পরিবার পূর্ব পূরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। আমরা পত্রপত্রিকায় মাধ্যমে জানতে পারলাম, পরাগ মন্ডল তার বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান এবং শিশু পরাগই পরিবারের দুর্বলতম জায়গা। সুতরাং হতে পারে পরাগ অপহরনের মাধ্যমে পরিবারকে মানসিক ভাবে দূর্বল করে পরাগের পরিবারকে উচ্ছেদ করার একটি পায়তারা। যদি তাই হয়, তাহলে এটি মোটেও বিছিন্ন কোন ঘটনা নয়, বরং এটি পরিকল্পিত একটি ভয়ংকর ঘটনা, যা সংখ্যালগুদের উপর সংঘঠিত হয়েছে এমন অন্যান্য ঘটনার একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। ***** অরুন চন্দ্র মজুমদার, ঢাকা, ১৭/১১/২০১২ইং

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন