মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১২

"যশোরেশ্বরী " পূজা স্মরণিকা এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান



সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, এম এম কলেজ, যশোর শাখা শুভ মহালয়া ১৪১৯ উদযাপন করে ১৫ অক্টোবর ২০১২ বিকাল ৩ টায়

"যশোরেশ্বরী " পূজা স্মরণিকা এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান


প্রদীপ প্রজ্বলন


সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, এম এম কলেজ, যশোর শাখা শুভ মহালয়া ১৪১৯ উদযাপন করে ১৫ অক্টোবর ২০১২ বিকাল ৩ টায়

বিগত আত্মা গনের জন্য প্রদীপ প্রজ্বলন করেন উপস্তিত সকলে


এই বছর পূজা অনুষ্ঠিত হবে প্রায় ২৮০০০ এর অধিক মণ্ডপে

মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ এর তথ্য মতে, “এই বছর বাংলাদেশে গত বছরের তুলনায় এক হাজারের মত বেশি মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

গত বছর বাংলাদেশে মোট ২৭৩৪৫টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা হয়েছে আর এই বছর পূজা অনুষ্ঠিত হবে প্রায় ২৮০০০ এর অধিক মণ্ডপে। ঢাকাতে ২০২ টি মন্ডপে পূজো অনুষ্ঠিত হবে যা গতবার থেকে ১০ টি বেশী ।
 
 

শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১২

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংস চলছেই, এবার লালবাগের মন্দির

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংস চলছেই, এবার লালবাগের মন্দির






রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে ফেলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর সংরক্ষণ কমিটি ২০০৯ সালে ঢাকার সংরক্ষণযোগ্য ঐতিহ্যবাহী ভবনের যে তালিকা করেছিল, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না পাওয়া এর একটি বড় কারণ। ঐতিহ্যবাহী ভবন ধ্বংসের সর্বশেষ শিকার হয়েছে লালবাগের শেখ সাহেব বাজারের দৃষ্টিনন্দন মন্দিরটি।

পুরান ঢাকার কোনো কোনো মহল্লার প্রায় সব কটি ঐতিহ্যবাহী ভবন ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ইতিহাসপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞদের তাগিদ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে নির্বিচারে পুরোনো স্থাপত্য ভাঙার হার বেড়েছে বলেই অনেকে মনে করেন।
পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় এখন ঐতিহ্যবাহী ভবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি উত্তর মৈশুন্ডি এলাকায় গিয়ে কোনো পুরোনো ভবন পাওয়া যায়নি। সেখানে শত বছরের পুরোনো অন্তত ১০টি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের বেলায় এসব ভবন ভাঙা হয়। সেখানে বহুতল ভবন হবে বলে তাঁরা শুনেছেন।
ওয়ারী থানার গোলক পাল লেনে রাস্তার পাশের কয়েকটি পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। লালবাগের আমলীগোলায় জগন্নাথ সাহার ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ভেঙে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। মোগল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক স্থাপনা ছোট কাটরা ও বড় কাটরার অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী, সংরক্ষিত এসব স্থাপনার চারদিক ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও চারপাশে বড় বড় ভবন তোলা হচ্ছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত নগর সংরক্ষণ কমিটি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঐতিহ্যবাহী ভবনের যে তালিকা করেছিল, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কমিটির সভাও অনেক দিন ধরে হয় না। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে প্রকাশিত গেজেটে পুরান ও নতুন ঢাকার ৯৩টি ভবন ছাড়াও চারটি অঞ্চল ও এর ১৩টি রাস্তাকে সম্পূর্ণ সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছিল। কথা ছিল, ওই তালিকায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং এলাকা যুক্ত করা হবে। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। তা ছাড়া অর্পিত সম্পত্তি আইনের কয়েকটি ‘দুর্বলতার’ সুযোগেও অনেক ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান জানান, কিছু ভবনকে নোটিশ করা হয়েছে। কয়েকটি ভবনের মালিক ও ভাঙার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সংরক্ষিত ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ বছরের শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারি পাঁচজন প্রতিনিধির একটি উপকমিটি করা হয়। এ উপকমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, রাজউক স্থাপনা ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া কমিটি একটি নীতিমালা তৈরি করছে, যাতে মূল কাঠামো ঠিক রেখে পুরোনো ভবনগুলো সংস্কার করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
সর্বশেষ শিকার: পুরান ঢাকার সংরক্ষিত তালিকাভুক্ত ৩৩ প্যারীদাস রোডের বাড়ি, সংরক্ষিত এলাকা ২৮ উৎসব পোদ্দার লেনের দোতলা বাড়ি, টিপু সুলতান রোডের শঙ্খনিধি ভবনের একটি মন্দির, আলাউদ্দিন রোড ও ডালপট্টির একাধিক বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ প্রবণতার সর্বশেষ শিকার হয়েছে লালবাগের শেখ সাহেব বাজারে অবস্থিত জমিদার কেদারনাথ শীলের বাসভবনসংলগ্ন শৈলীময় স্থাপত্যের মন্দিরটি। ২৫৫ ও ২৫৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে অবস্থিত স্থাপনাটি সপ্তাহ খানেক ধরে ভাঙা হচ্ছে। মন্দিরটি অনেক দিন ধরে কারখানা ও গুদামঘর হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছিল।
স্থানীয় লোকজন জানান, মন্দিরের একাংশের বর্তমান ভোগদখলকারী মৃধা অ্যান্ড কোম্পানি কিছু দিন আগে ভবনটির ছাদ ভাঙার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। ছাদটি দ্রুত ভেঙেও ফেলা হয়। 
মৃধা অ্যান্ড কোম্পানির একজন অংশীদার মাহমুদ আলী মৃধা বলেন, মন্দিরটি তাঁরা ভাঙেননি। দুই মাস আগের ঝড়-বৃষ্টিতে তা ভেঙে গেছে। তবে গত সোমবার সেখানে নিয়োজিত শ্রমিক ও আশপাশের বাসিন্দারা বলেন, মন্দিরের ছাদ আয়োজন করেই ভাঙা হয়েছে।
মন্দিরের মূল অংশটির সামনের দিকে রয়েছে কারুকার্যমণ্ডিত পাঁচটি অর্ধবৃত্তাকার খিলান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দুটি হোল্ডিং নম্বরের মালিক কেদারনাথ শীল ও তাঁর ভাই পরিতোষ শীল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ভারতে চলে যান। পরে বিভিন্ন সময় বিহারিসহ কয়েকজনের কাছে ওই সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়। এভাবে সম্পত্তির একাংশ মৃধা অ্যান্ড কোম্পানির হাতে আসে।
নগর সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং ‘আরবান স্টাডি গ্রুপ’ নামের একটি সংরক্ষণকামী সংগঠনের প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে প্রথম আলোকে জানান, প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো স্থাপনাটি ধ্রুপদি স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের স্থাপনা ধ্বংস করা শুধু দুঃখজনকই নয়, আমাদের জন্য চরম অগৌরবজনক।’
স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন শুক্রবার এ বিষয়ে বলেন, সংরক্ষিত বা ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো রক্ষার সব প্রচেষ্টাই প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কথা ছিল রাজউক এ ধরনের ভবনের তালিকা করবে। সিটি করপোরেশন এ ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন তো সিটি করপোরেশনের কোনো মা-বাপ নেই।

বাংলাদেশেও হিন্দু নির্যাতনের জন্য ইস্যু হিসেবে দেখানো হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মানুভূতিতে আঘাতের মিথ্যে গুজব ।

বাংলাদেশেও হিন্দু নির্যাতনের জন্য ইস্যু হিসেবে দেখানো হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মানুভূতিতে আঘাতের মিথ্যে গুজব  
*সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের হাইস্কুল মাঠে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে 

মঞ্চস্থ করা হয়েছিল হুজুরে কেবলা নাটক যা মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অংশ বিশেষ যেখানে অভিনেতা ,স্ক্রিপ্ট রচয়িতা প্রায় সকলকেই ছিল মুসলিম শুধুমাত্র যে শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে হয়েছিল তিনি ছিলেন হিন্দু ,তাই নাটক মঞ্চস্থ করার দু দিন পর মহানবীকে কটাক্ষ করার গুজব রটিয়ে শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করে উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে করা হল মামলা,শুধু কি তাই মসজিদে লিফলেট বিতরণ করে দুই গ্রামের হিন্দুদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হল, ট্রলি করে লুট করে নিয়ে যাওয়া হল হিন্দুদের সব মালপত্র 
*চট্রগ্রামের হাটহাজারীতে লোকনাথ বাবার অনুষ্ঠানের র্যালি তে পাথর নিক্ষেপ করে উল্টো মসজিদে হামলার কথা বলে হিন্দুদের শারীরিক নির্যাতন করা হল এরপর দুই দিন ব্যাপী পুলিশের সামনে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক অবরোধ করে হাটহাজারীর সব মন্দির ধ্বংস করে মন্দিরের দান বাক্স ও মূল্যবান মালপত্র করা হল লুট করল আর উল্টো মুফতি আমিনীদের পক্ষ থেকে করা হল নিরীহ হিন্দুদের বিরুদ্ধে মামলা

*দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের দুই হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে কিছুদিন আগেও হয়ে গিয়েছিল নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান এলাকার এক প্রভাবশালী হিন্দুর সুনামে ও সম্মানজনক পজিশনে ঈর্ষান্বিত অধ্যাপিকা হামিদা বানু দুই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে বলাইবাজারে জায়গা ক্রয় করে মার্কেট দেন এবং তিনি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেন কিন্তু স্থানীয় হিন্দু গ্রামবাসী মুসলিম শুণ্য সরকারি রাস্তার জমিতে মসজিদে নির্মাণে আপত্তি জানাইলে হামিদা বানু হিন্দুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এবং তারপর পুলিশ মোতায়ণ করা হয় এবং 144জারি করা হয় ,কিন্তু পরদিন 144 থাকা সত্ত্বেও যখন সাধারণ Hinduরা যখন মাঠে কাজ করছিল তখন অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালানো যায় জালিয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি আর এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল বহিরাগত এলাকার টেরোরিস্টদের ,এ বছর নিরাপত্তার অভাবে গোটা উপজেলার দূর্গা পুজো না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে

*সিলেটে একই সঙ্গে পুজো ও ঈদের শুভেচ্ছাস্বরুপ এক পাশে দুর্গার ত্রিনেত্র ও অপরপাশে মক্কার ছবি দেওয়া হলে ইউপি মেম্বার কে আটক করা হয়


সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার(ব্লাসফেমি)অভিযোগে আটক খ্রিষ্টান কিশোরী রিমশাকে কিছুদিন পূর্বে আটক করা হয়েছিল রিমশা কোরান পুড়িয়েছেন বলে অভিযোগ আনেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম হাজী মোহাম্মদ খালিদ চিশতিতিনি দাবি করেন , রিমশার ব্যাগে কোরান শরীফের পোড়া অংশ রয়েছে এবং তল্লাশি করে তা পাওয়াও যায় ,তাই গত ১৬আগস্ট তাকে গ্রেফতার ও করা হয় কিন্তু পরে জানা যায় যে খালিদ ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েটিকে ফাঁসানোর জন্য ব্যাগে কাগজপত্র সরিয়ে কোরাণের ছেঁড়া অংশ প্রবেশ করে দেয় কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে অবশেষে গত শুক্রবার পাঁচ লাখ রুপির বিনিময়ে তাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে আদালতউল্লেখ্য রিমশাই প্রথম ব্লাসফেমির মামলায় দেশটিতে জামিন পেলেন খবর-বিবিসি,রয়টার্স
 

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ ধাম

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ ধাম । ।এ মন্দিরের অধিষ্ঠিত ভগবান শিবের নাম এখানে চন্দ্রনাথ।এই মন্দির সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১২-১৩শ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

Chandranath Mandir at Chandranath Pahar, Sitakundu, chittagong

উল্লেখ আছে যে, শিবের স্ত্রী সতীর পিতা রাজা দক্ষ যগ্যানুষ্ঠান করছিলেন, কিন্তু তিনি জামাতা শিবকে ছাড়া আর সকল দেব-দেবীকে সে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন করেন।এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী সে যগ্যে আত্নাহূতি দিয়ে দেহত্যাগ করেন।ভগবান শিব তখন সতীর মৃতদেহনিয়ে প্রলয় নৃত্য করতে থাকেন।পুরো সৃষ্ট ধংস হবে দেখে ভগবান বিষ্ণু শিবের প্রলয় নৃত্য বন্ধ করার জন্য তার সুর্দশন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড খন্ড করে ফেলেদেন।এই দেহাবশেষ ৫১ খন্ড করে ৫১ স্থানে ফেলা হয়, তা থেকে ৫১ মাতৃপীঠ বা শক্তিপীঠের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় মেলা হয় যা শিবর্তুদশী মেলা নামে পরিচিত।এ সময় দেশ-বিদেশের অনেক সাধু সন্যাসী এবং নর-নারী (বিশেষ করে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা থেকে)এখানে আসেন।এ সময় এই এলাকা প্রচুর জনাকীর্ণ হয়ে উঠে।

ধর্ম ঃ প্রসঙ্গ- (৮) অলৌকিকত্ব বা রূপকথা (মিথ)ঃ

অলৌকিকত্ব বা রূপকথা (মিথ)ঃ
অলৌকিকত্ব বা রূপকথা হলো ধর্মের তৃতীয় গুরুত্ব পূর্ণ উপাদান। মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে শক্ত পোক্ত করার জন্য দৃশ্যমান প্রতিটি ধর্মের মাঝে এটি বিদ্যমান। যে সকল মানুষ জ্ঞানী বা বিদ্বান নয়, অথচ তাদের ধর্ম চিন্তার মূলে হলো বিশ্বাস, এধরনের মানুষ ধর্মের এ উপাদানটুকু ধারণ ও লালন করে ধর্ম চর্চা করতে পছন্দ করে।

অলৌকিকত্ব বা রূপকথা গুলো বর্তমানে প্রচলিত সকল ধর্ম ও উপধর্ম গুলোতেই বিদ্যমান। যেমন, হিন্দু ধর্মে পুরানে বর্ণিত আছে রাস রাজ রাবন রামের স্ত্রী সীতাকে হরন করে পুস্পক রথে আকাশ পথে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নিজ রাজ্য লংকায় নিয়ে গেছেন, কিংবা রাম সমুদ্রে পাথর ভাসিয়ে সেতু নির্মান করে সৈন্য নিয়ে লংকায় গিয়ে যুদ্ধ করেছে। মহাভারতে আছে অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের রথের সারথী সঞ্চয় রাজা সভায় রাজার পাশে বসে দিব্য দৃষ্টিতে যুদ্ধ ক্ষেত্রের সমস্ত ঘটনা অবলোকন করে রাজাকে শুনাচ্ছেন। এভাবে খ্রিষ্ট ধর্মেও আছে ঈশ্বর যীশু কয়েক টুকরা মাছ ও কয়েক খন্ড রুটি দিয়ে কয়েক হাজার লোককে পেট ভর্তি করে খাইয়েছেন। কিংবা ইসলাম ধর্মে আছে সবে মেরাজের ঘটনা, যেখানে মহানবী অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক পাখাওয়ালা ঘোড়া নাম বোরাখে (বাস্তবে এধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, অতীতে ছিল কি না, সে বিষয়ে কোন তথ্য প্রমান নেই) ছড়ে করে সপ্তম আসমানে গিয়ে আল্লার সাথে দেখা করে এসেছেন।

এ অলৌকিকত্ব গুলির কোন কোনটি কখনো কখনো বৈজ্ঞানিক ভাবে সত্য, কিংবা কোন কোনটি কল্প বিজ্ঞান যা কৌশলটি পরে আবিস্কৃত ও প্রমানিত হয়েছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কোনটি এতটা অতিরঞ্জিত গাঁজাখুরি ভাবে উত্থাপন করা হয়েছে যে, এটি কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, অথচ ধর্ম বিশ্বাসের কারনে কোন যুক্তি ছাড়াই বিশ্বাস করতে হচ্ছে। তবে এটি জোর করে বলায় যায়, যে মিথ গুলোতে বৈজ্ঞানিক সম্ভবনা নাই, এগুলি গাঁজাখুরি গল্প ব্যতীত আর কিছু ভাববার অবকাশ নেই, যেটি শুধুমাত্র ছড়ানো হয়েছে মানুষে মনে ভীতি সঞ্চার করে মানুষকে নিজ মতবাদ প্রচার করার জন্য। আমি অন্য ধর্মে বিষয়ে না গিয়ে শুধু মাত্র হিন্দু ধর্মের কয়েকটি মিথ নিয়ে আলোচনা করব, এখন দেখব এগুলোর বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা ও সত্যতা কতটুকু ছিল।

হিন্দু ধর্মে অলৌকিকত্ব বা রূপকথা (মিথ)ঃ
অধুনা হিন্দু ধর্ম পূর্বে পৌরানিক ধর্ম বলা হয় এ জন্যে যে এর অনেক পুরোনো ইতিহাসের সাথে সাথে বহু পৌরানিক গল্প আছে যেগুলি অলৌকিকত্বে ভরা। যেমন রামায়নে আছে, রাবন সীতাকে হরন করে পুস্পক রথে করে আকাশ পথে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে লঙ্কায় নিয়ে গেছে। আরো আছে রাম নিজ স্ত্রী সীতা মাকে উদ্ধারের জন্য পাথর দিয়ে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে পথ তৈরী করেছেন। এগুলো সাদামাটা দৃষ্টিতে গাঁজাখুরি গল্প মনে হলেও একটু খেয়াল করুন ১৯০০ শতকের প্রথম দিক থেকে কি মানুষ বিমানের মাধ্যমে আকাশ পথে চলাচল করে না? রাবনের সেই পুস্পক রথকে আজকের বিমান ভাবলে দেখবেন এটি অযথা কোন মিথ ছিল না। কিংবা আজকের নদী ও সমুদ্রের উপর বড় বড় বীজ্র গুলোর দিকে তাকালে রামের কার্যটিকে অসাধ্য কিংবা গাঁজাখুরি ছিল ভাবার দেখার সুযোগ নাই। এছাড়া নাসার ছবিতে ভারত মহাসাগরে এ ধরনের নিমর্জিত সেতুর অস্তিত্ব সাগর তলে বিদ্যামান। হিন্দুদের মহাভারতের যুদ্ধের শুরুতে অন্ধ ধৃষ্টরাষ্ট্র যুদ্ধের ঘটনা দেখার জন্য রাজার রথের সারথী সঞ্জয়কে রাজ প্রাসাদে নিয়োগ করা হয়েছিল, ঋষি ব্যসদেবের আশির্বাদে সারথী সঞ্জয় রাজপ্রাসাদে বসে কুরুত্রে যুদ্ধ অবলোকন করে সেটির ধারাভাষ্য বর্ণনা করে অন্ধ রাজাকে শুনিয়েছেন। এ ঘটনাটি মিথ ও হিন্দু পৌরানিক বিশ্বাস, কিন্তু আজকের ডিজিটাল যুগে আমার কি দেখছি? টেলিভিশন ব্রড কাষ্ট কিংবা ইন্টারনেট স্কাইপির সাহায্যে কি আমরা ঘরে বসে অনেক দূরের ঘটনা প্রত্যে করছি না? এভাবে হিন্দু ধর্মের সকল মিথগুলির চির আধুনিক ও কল্প বৈজ্ঞানিক ভিক্তি খুব শক্ত পোক্তভাবে বিদ্যমান, যে গুলি অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে খুঁেজ পাওয়া ভার। এভাবে হিন্দু পুরানে প্রতিটি মিথের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। সময় পেলে হিন্দু পৌরানিক মিথ বনাম বিজ্ঞান, উইপনোলজী নামে কিছু লেখার প্রত্যাসা করি। **** অরুন চন্দ্র মজুমদার, ঢাকা, ১৩/১০/2012

বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

রীমদ্ভগবদগীতা আলোকে নারীর ঐশ্বর্যগুণ ।

শ্রীমদ্ভগবদগীতা আলোকে নারীর ঐশ্বর্যগুণ --

এই প্রশ্ন উত্তর পর্বটি আলোচনা হয়েছিল ভারতে পুনেতে এবং প্রশ্নের উত্তর প্রদান করছেন অখিলাত্মানন্দ দাস, যা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল ----

= প্রশ্নঃ – একথা কী সত্যি যে, গীতায় শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন, মানুষের চরিত্রে যতরকম দোষ থাকতে পারে, সবই নারী ও শূদ্রের চরিত্রে আছে এবং জন্মান্তরীয় পাপের ফলেই জীব নারী ও শূদ্ররূপে পাপযোনিতে জন্মগ্রহণ করে থাকে ?

উত্তরঃ – না একথা একদম সত্যি নয় । যারা এ ধরনের কথা প্রচার করে তারা কখনও একথা উল্লেখ করে না যে গীতার কোন শ্লোকে এরকম কথা স্পষ্টভাবে কিংবা আকারে ইঙ্গিতেও বলা হয়েছে । আসলে হয়েছে কি ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’ মহাগ্রন্থটি হাজার হাজার বছর ধরে মানব সমাজে এতটায় আদরনীয় ও সন্মানীয় যে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সময়ে জড়জাগতিক জ্ঞানের নিরিখে ‘জ্ঞানী’ সন্মানে ভূষিত কেউ কেউ ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’র সঙ্গে নিজের নামটি জড়ানোর অভিপ্রায়ে শ্রীমদ্ভগবদগীতা শ্লোকেসমূহের নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদান করে গ্রন্থ রচনা করছেন । এইসব তথাকথিত পন্ডিতদের অপব্যাখ্যাগুলিই সহজ সরল সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কারণ । উপরোক্ত প্রশ্নটিও তাই সেইরকম বিভ্রান্তি থেকে উঠে আসা একটি প্রশ্ন । শ্রীমদ্ভগবদগীতার কোন শ্লোকের কোথাও নারীদের প্রতি অবমাননার কোন কথা বলা হয় নি । বরং জেনে রাখা ভাল শ্রীমদ্ভগবদগীতায় আত্মোপলব্ধির জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে । অর্থাৎ আমি এই দেহ নই, প্রকৃতপক্ষে আমি হচ্ছি চিন্ময় আত্মা । আর এই চিন্ময় আত্মার কোন লিঙ্গ ভেদ হয় না । আত্মা আত্মাই । আত্মার নারী বা পুরুষগত কোন ভেদ নেই । তাই শ্রীমদ্ভগবদগীতায় নারীদের নিয়ে কোন অবমাননাকর কথা যে হতে পারে না, সেটা বলা বাহুল্য । তাছাড়া পরম্পরাগত ভারতীয় সনাতন ধর্মে নারীদেরও সন্মানের সঙ্গে ‘গুরু’ বা আচার্যের আসনেও বসানো হয়েছে । এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন ‘যেই কৃষ্ণ-তত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয় ।’ অর্থাৎ একজন নারীও যদি কৃষ্ণ-তত্ত্ববেত্তা হন তাহলে তিনিও গুরু হবার যোগ্যতা লাভ করবেন । সেক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের ভেদাভেদ বিবেচ্য নয় ।

=প্রশ্নঃ – তবে একথা তো ঠিক যে, গীতার প্রথম অধ্যায়ে ৪০ নং শ্লোকে মহামানব অর্জুন যুদ্ধভয়ে ভীত হয়ে বাস্তবিকই বলেন যে, অধর্মের দ্বারা অভিভূত হয়ে সমাজের কুলবধূরা ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং তারা অসৎচরিত্রা হলে দেশের মধ্যে বহু অবাঞ্চিত প্রজাতি উৎপন্ন হয় ?

উত্তরঃ – ঠিক তাই । গীতার ঐ শ্লোকের পরবর্তী শ্লোকটিতে (১/৪১) অর্জুনের বক্তব্য যা বলা আছে, তার অর্থ এই যে, বর্ণসঙ্কর অর্থাৎ বিভিন্ন বর্ণ ও জাতির অবাধ মিশ্রণে অবাঞ্চিত সন্তানিদের সৃষ্টি বৃদ্ধি পেলে বংশধারায় ঐতিহ্য অধঃপতিত হতে থাকে । আবার তার পরের শ্লোকটিতে (১/৪২) অর্জুনের ভাবদারায় বলা হয়েছে – যে সব নারী বংশের ঐতিহ্য নষ্ট করে এবং তার ফলে অবাঞ্চিত সন্তানাদি সৃষ্টি করে, তাদের কুকর্মজনিত দোষের ফলে সর্বপ্রকার জাতিধর্ম ও কুলধর্ম উৎসন্নে যায় । ফলে, চিরন্তনী জাতিধর্ম তথা কুলধর্ম বিনষ্ট হয় । দায়িত্বজ্ঞানহীন সমাজনেতাদের প্রশ্রয়ে এবং পরিচালনাতেই এইভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ।
অবশ্যই, গীতার প্রথম অধ্যায়ে এই শ্লোকগুলি তো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উক্তি নয় – এগুলি অর্জুন বলেছিলেন যুদ্ধবিগ্রহে তাঁর ঐকান্তিক অনীহা প্রকাশের কারণস্বরূপ । অর্জুন তখনও শ্রীকৃষ্ণের কাছে যথার্থ জ্ঞান আহরনের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেননি, তাই তিনি নিতান্তই সাধুসন্তদের কাছে শোনা-কথার ভিত্তিতে এই সমস্ত যুক্তির অবতারনা করেন । ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ’ অতুলনীয় মহাগ্রন্থের মধ্যে জগদগুরু শ্রীল অভয়চরণাবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১/৪৩ শ্লোকের তাৎপর্য বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে তাই লিখেছেন, ‘অর্জুন সমস্ত যুক্তিতর্ক তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং তিনি সাধুসন্ত ইত্যাদি মহাজনদের কাছ থেকে আহরণ করা জ্ঞানের ভিত্তিতে এই সমস্ত যুক্তির অবতারণা করেছিলেন ।’ যথার্থ পরমগুরু পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের কাছে জ্ঞান লাভ করবার আগেই অর্জুন নারীজাতি সম্পর্কে এই ধরনের হতাশাব্যঞ্জক উক্তি করেছিলেন ।

=প্রশ্নঃ – তা হলে নারীজাতির কুকর্মজনিত দোষাদির ফলে জাতিকুল কলুষিত হওয়ার সম্ভবনা থেকে সমাজকে রক্ষা করবার উপায় কি ?

উত্তরঃ – অবশ্যই, নারী বা পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই ত্রুটিপূর্ণ কাজের কুফল থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে নানা প্রকার সংশোধনী তথা প্রায়শ্চিত্তমূলক ক্রিয়াকর্মের বিধান সনাতন (চিরন্তন) ভারতীয় ধর্মাচারের অঙ্গ হিসেবে ব্যাপকভাবে সুস্বীকৃত হয়ে রয়েছে । আধুনিক মনোভাবাপন্ন উন্নাসিক মানুষেরা অবশ্য প্রায়শ্চিত্ত কিংবা আত্মিক সংশোধনের তোয়াক্কা করে না, সেটা তাদের অহমিকা মাত্র । ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ভুল কাজ করা হলে, সংশোধনের মনোবৃত্তির মাধ্যমে আবার সৎপথে জীবন যাপন করবার বিধি ভারতীয় সমাজশাস্ত্রে নানাভাবে দেওয়া রয়েছে এবং সেগুলির সম্যক্ যথার্থতাও রয়েছে ।
নারীজাতি সম্পর্কে অর্জুনের অজ্ঞানতাজনিত উক্তির প্রাথমিক প্রতিফলন শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রথমাংশে থাকলেও এই মহান্ গ্রন্থখানির পরবর্তী অংশে ‘বিভূতিযোগ’ অধ্যায়ে যখন অর্জুনের অনুসন্ধিৎসা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর নিজের বিভিন্ন বিভূতি অর্থাৎ ঐশ্বর্যগুণের বর্ণনা দিয়েছেন, তখন দ্বিধাহীন ভাষাতেই তিনি জগৎবাসীকে জানিয়েছেন যে, নারীদের মধ্যে কীর্তি, শ্রী, বাণী, স্মৃতি, মেধা, ধৃতি এবং ক্ষমা – এই সমস্ত গুণাবলী তিনি পরম কৃপাভরে সৃষ্টির আদিকাল থেকেই অর্পণ করে রেখেছেন । আর, তিনি ঐ সমস্ত গুণাবলীর মাধ্যমেই নারীর মধ্যে বিরাজ করে থাকেন । (গীতা ১০/৩৫) কোনও নারী যখন এই সমস্ত ঐশ্বর্য তথা গুণাবলীতে নিজেকে বিভূষিতা করে রাখতে পারেন, তখন তিনি বাস্তবিকই জনসমাজে মহিমান্বিতা হয়ে উঠেন ।

=প্রশ্নঃ তাই যদি হয়, তা হলে এদেশে-বিদেশে নারীজাতির এত অবমাননা কেন হচ্ছে ?
উত্তরঃ ভারতবর্ষের সনাতন (চিরকালীন) জ্ঞানভান্ডার সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞানের অভাবেই বহু মানুষ এভাবে নারী সম্প্রদায়ের অযথা অবমাননা করতে শেখে । গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১০/৩৫ নং শ্লোকটিতে নারীর মধ্যে ঐশ্বরিক গুণাবলীর ঐশ্বর্য নিহিত রয়েছে বলে যে ঘোষনা করেছেন, তার প্রতি নারী সমাজের সযত্ন মনোযোগ আকর্ষনের মাধ্যমে তাঁদের হীনমন্যতা দূর করাই আমাদের অবশ্যকর্তব্য বলে মনে করি । আমাদের সমূহ আশঙ্কা হয় যে, গীতার নবম অধ্যায়ের ‘রাজগুহ্য যোগ’ থেকে ৩২ নং শ্লোকটির ভুল অনুবাদ এবং বিকৃত ব্যাখ্যা কোনও কোনও প্রচলিত বিতর্কিত গীতা-ব্যাখ্যায় নারীর মর্যাদা সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে অনেকেই বিভ্রান্তিবোধ করে থাকেন । শ্লোকটি এরকম –

মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাংগতিম্ ।। (গীতা ৯/৩২)

শ্লোকটির যথার্থ অন্বয় হওয়া উচিত এইরকম –
“হে পার্থ (পৃথাপুত্র অর্জুন), যে কেউ পাপযোনিতে (নীচ বংশে) জন্মগ্রহন করে, (নীচকুলজাত) শূদ্র, চন্ডালেরা, স্ত্রীলোকেরা এবং বৈশ্য (ব্যবসায়ীরা), তারা যখনই একাগ্রমনে আমার প্রতি (শ্রীভগবানের প্রতি) আশ্রয়গ্রহন করে, তখন তারাও পরম গতি লাভ করে থাকে ।”

=প্রশ্নঃ – তবে কি নীচবংশে জাত শূদ্র এবং চন্ডালের সাথে একই স্তরে স্ত্রীলোক এবং বৈশ্য-ব্যবসায়ীদের মর্যাদা বিবেচনা করতে গীতায় বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ -- শূদ্র, চন্ডালেরা, স্ত্রীলোক এবং ব্যবসায়ীদের একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে বলেই তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না । যেহেতু সমাজে অনেকে স্ত্রীলোকদের পক্ষে পূজা-অর্চনাদি করার যোগ্যতা সম্পর্কে কুসংস্কারমূলক দ্বিধা-দ্বন্ধ পোষণ করে থাকে, সেই কারনেই এই শ্লোকটিতে সুস্পষ্টভাবে অভিব্যক্ত হয়েছে যে, শ্রীভগবানের শ্রীচরণে যে কোনও মানুষ, স্ত্রীলোকেরাও বিশেষভাবে আশ্রয় (ব্যপাশ্রিতা) গ্রহণ করবার যোগ্যতা এবং অধিকার আছে ।
এই শ্লোকটিতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্টভাবেই ঘোষনা করেছেন যে, ভক্তিযোগে সকলেরই সমান অধিকার রয়েছে – এতে কোন জাতিকুল বা লিঙ্গ ভেদাভেদ নেই । ভগবদ্-ভক্তি এবং শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তের সঙ্গলাভ এমনই শক্তিসম্পন্ন এবং এমনই উন্নত যে, তাতে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ থাকে না । যে কোনও জীব ভক্তিমার্গ গ্রহণ করতে পারে । সর্বতোভাবে নগণ্য মানুষটিও যদি শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তের আশ্রয় গ্রহণ করে, তা হলেই সে অচিরে যথাযথ পথনির্দেশের মাধ্যমে শুচিতা অর্জন করতে পারে । এমনই উদারমনোভাবাপন্ন গীতার বানী !

=প্রশ্নঃ – নারী এবং পুরুষের মধ্যে পার্থক্য আছে, তা না হয় বুঝলাম – কিন্তু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র – এমন সব জাতিভেদ প্রথা থাকবে কেন ?

উত্তরঃ – গীতার যথাযথ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, প্রকৃতিজাত কর্মগুণ অনুসারে মানুষকে সর্বকালে সর্বদেশেই চারভাগে ভাগ করা হয়েই আসছে – (১) সত্ত্বগুণবিশিষ্ট মানুষ (ব্রাহ্মণ)—অবশ্যই জন্মসূত্রে নয়—কর্মগুণের বিচারে, ব্রহ্মজ্ঞান লাভের মাপকাঠিতে; (২) রজোগুণবিশিষ্ট ক্ষত্রিয় (শাসক সম্প্রদায়—সর্বদেশেই আছে এবং থাকবে); (৩) রজঃ ও তমোগুণবিশিষ্ট বৈশ্য (বণিক সম্প্রদায়—সারা জগতেই চিরকাল রয়েছে); এবং (৪) তমোগুণবিশিষ্ট শূদ্র (নিতান্ত কর্মজীবী স্বল্পমেধার মানুষ, যারা কেবল গতরে খাটতেই পারে) ।
এটা কেবলমাত্র ভারতবর্ষের শাস্ত্রীয় বিধানমতে হয়েছে, তা তো নয় – মানব-সভ্যতার আদিকাল থেকেই সম্পূর্ণ সমাজবিজ্ঞানসম্মতভাবেই মানব সমাজে জগতের সর্বত্রই বিদ্যমান রয়েছে এই বর্ণবিভাগ, যা খুবই স্বাভাবিক ।

=প্রশ্নঃ -- অস্পৃশ্য, অশুচি – এমন সব বাছবিচার এসেছে কেন ?

উত্তরঃ -- যদি কোনও মানুষ গতরে খাটা মানুষের চেয়েও অধম কাজে প্রবৃত্ত হয়, তখন তাকে পাপযোনি চন্ডাল বলা হয় – এই ধরনের মানুষেরা যত সব নোংরা অকাজ কুকাজ করতে পারে – তাই তারা শূদ্রেরও অধম । আদিকাল থেকেই পৃথিবীর সব সভ্য দেশে এমন নিম্নরুচির মানুষ তো অনেক দেখা গেছে – তাই এটা ভারতবর্ষের পন্ডিতদের মনগড়া অলীক জাতিভেদ প্রথা নয় – এটাও চিরকালের সমাজবিজ্ঞানসম্মত প্রাকৃতিক সমাজব্যবস্থা ।
সাধারনত উচ্চবংশজাত কিছু মানুষ এই সমস্ত পাপযোনিতে (অর্থাৎ পাপময় জন্মজীবনে) দুষ্ট মানুষদের অস্পৃশ্য করে ঠেলে রাখেন, যাতে তাদের সংস্পর্শে সমাজ কলুষিত না হতে পারে এবং তারাও সৎ পথে উত্তরণে আগ্রহী হতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে ।
কিন্তু ভগবদ্ভক্তিযোগ এবং শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তের কল্যাণময় সঙ্গশক্তি এমনই প্রভাবশালী যে, তার স্পর্শে নীচযোনির মানুষেরাও মানবজীবনের পরম সার্থকতা এবং উৎকর্ষ লাভ করতে পারে এবং সেই উত্তরণ সম্ভব হয়ে ওঠে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপালাভের আশ্রয় গ্রহণে আগ্রহী হলে ।

=প্রশ্নঃ – সমাজে যেমন, কিছু মানুষকে অস্পৃশ্য, অশুচি করে রাখা হয়েছে, তেমনই কিছু স্ত্রীলোককে দুষ্টা প্রকৃতির বলা হয়ে থাকে কেন ?

উত্তরঃ -- দোষে-গুণে মিলিয়েই মানুষ হয় । বাস্তবিকই, অর্জুন তাঁর সাংসারিক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘স্ত্রীষু দুষ্টাসু’ কথা কয়টি উচ্চারণ করে পরম সখা শ্রীকৃষ্ণের কাছে আন্তরিকভাবেই অনুযোগ উত্থাপন করেছিলেন (গীতা ১/৪০) । তাঁর মানে এই নয় যে, সব স্ত্রীলোকেরাই দুষ্টা প্রকৃতির হয় । গীতার ১/৪২ নং শ্লোকটিতে অর্জুন তাঁর যথার্থ সামাজিক অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ বলেছেন –

দোষৈরেতৈঃ কুলঘ্নানাং বর্ণসংকরকারকৈঃ ।
উৎসাদ্যন্তে জাতিধর্মাঃ কুলধর্মাশ্চ শাশ্বতাঃ ।।

স্ত্রীলোকদের যত গুণাবলীই থাকুক, তাদের মধ্যে কতগুলি দোষের ফলে সমাজে অবাঞ্ছিত সন্তানাদি সৃষ্টি হয় এবং তাদের কুকর্মের ফলে সর্বপ্রকার সামাজিক উন্নতি ব্যাহত হয়, যার পরিনামে কল্যাণ ধর্ম একেবারে উচ্ছেন্নে যায় – বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে থাকে । সেই ৬ টি দোষ হল – ব্যভিবিচার, অবাধ মেলামেশা, অসন্তোষ, বাচালতা, নির্বুদ্ধিতা এবং ক্রোধ । লক্ষ করে দেখবেন – আজকের দিনেও নারীশিক্ষার ব্যাপক প্রসার হয়েছে বলে সকলে একবাক্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকলেও, যে কোনও নারীর মধ্যে এই ৬ টি দোষের কিছুমাত্র লক্ষণ দেখা গেলে সেখানে সামাজিক অশান্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে । তখন তো কিছু স্ত্রীলোককে দুষ্টা প্রকৃতির মানুষ বলতে মানুষ বাধ্য হবেই ।

=প্রশ্নঃ – তবে কি নারীদের পক্ষে কখনই অবাধ মেলামেশা, অসন্তোষ প্রকাশ, বাচালতা, ক্রোধের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা চলবে না ?

উত্তরঃ – আধুনিক যুগের নারী স্বাধীনতার পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রশ্ন তো স্বাভাবিক, তবে লক্ষ করলে দেখা যায় – যে সমস্ত নারী এই সমস্ত আচরণগত দোষগুলি স্বভাবগুণে অতিক্রম করতে পারে, তাদের নিয়ে সমাজে সংঘর্ষমূলক সমস্যা তেমন হয় না, -- পুরুষের দোষে তেমন সমস্যার সম্ভাবনা ঘটলেও নারীর সংযতগুণে সমাজে শান্তিরক্ষা হয়ে থাকে । গীতায় ‘বিষাদযোগ’ (সংসার-যুদ্ধে বিষন্নতার বিশ্লেষণ সম্পর্কিত) অধ্যায়ে গৃহী-সংসারী অর্জুন বুঝি সংসারচক্রে বীতশ্রদ্ধ হয়েই তাঁর পরমসখা শ্রীকৃষ্ণের কাছে অনুযোগ করে তাই বলে উঠেছিলেন –

অধর্মাভিভবাৎ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রিয়ঃ ।
স্ত্রীষু দুষ্টাসু বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্কর ।। (গীতা ১/৪০)

“হে কৃষ্ণ, অধর্মের দ্বারা অভিভূত হলে কুলবধূগণ ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং হে বার্ষ্ণেয় (বৃষ্ণিবংশজাত শ্রীকৃষ্ণ), কুলস্ত্রীগণ অসৎচরিত্রা হলে অবাঞ্ছিত প্রজাতি উৎপন্ন হয় ।”
কুরু-পান্ডবদের বৃহৎ পরিবারগোষ্ঠীর মধ্যে নানাপ্রকার প্রত্যক্ষ সাংসারিক অভিজ্ঞতায় জর্জরিত অর্জুন যথার্থই বলতে চেয়েছিলেন যে, সমাজের স্ত্রীলোকেরা সৎ চরিত্রবতী এবং সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাকতে পারলে তবেই সৎজনগণ উৎপন্ন হতে পারে – এই মতবাদে আজও কোনও অভিজ্ঞ মানুষ ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন না ।

=প্রশ্নঃ -- গীতায় এইভাবে ‘স্ত্রীষু দুষ্টাসু’ (১/৪০) বলে স্ত্রীলোকদের দুষ্টা প্রকৃতির মানুষের মতো হেয়জ্ঞান করা হয়েছে মনে করে অনেকেই বিব্রতবোধ করে থাকতে পারেন তো ?

উত্তরঃ -- ভারতবর্ষের সুমহান সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সংস্কৃত ভাষাটির প্রতি বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে শিক্ষাবিদমহলে অবহেলা আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ফলেই সংস্কৃত ভাষায় রচিত “গীতা” শাস্ত্রের এমন কদর্থ হচ্ছে ।
‘স্ত্রীষু দুষ্টাসু’ মানে সব স্ত্রীলোকেরাই দুষ্টা প্রকৃতির নয় – যথার্থ তাৎপর্য এই যে, স্ত্রীলোকেরা দুষ্টা প্রকৃতির হলে – অশান্ত, দুরন্ত, অসৎ বা মন্দ প্রকৃতির হলে – কি হয়ে থাকে, সে কথাই বলা হয়েছে । যে ভালো বাংলা অভিধানেও ‘দুষ্ট’ কথাটির মূল সংস্কৃত তাৎপর্য দেখে বুঝে নিলেও শ্লোকটির অপব্যাখ্যার অবকাশ থাকে না । গার্হস্থ্য জীবনে অভিজ্ঞ, শিক্ষিতা বা অশিক্ষিতা যে কোনও আধুনিক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেও, তিনি এই চিরন্তন সামাজিক সত্যটি স্বীকার করে নিবেন । ‘দুষ্টা’ মানে দোষযুক্তা ।
বাস্তবিকই এই দোষের ফলেই শিশুদের মধ্যে যেমন অতি সহজেই বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, স্ত্রীলোকদের সরলতার মধ্যেও তেমনই অতি সহজেই অধঃপতিত হওয়ার প্রবণতা থাকে । তাই, শিশু এবং স্ত্রীলোক উভয়েরই পরিবারগোষ্ঠির মধ্যে প্রবীণদের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং তত্ত্বাবধানের একান্ত প্রয়োজন চিরকালই আছে, চিরকালই থাকবে, থাকা উচিত । এই মতবাদে কেউ যদি ‘পুরুষপ্রধান সমাজ’ ব্যবস্থাকে অযথা দোষারোপ করতে উদ্যত হন এবং নারী স্বাধীনতার প্রবক্তা হয়ে উঠতে চান, তাহলে তিনি সামাজিক প্রতিরক্ষা এবং তত্ত্বাবধানের নিরাপত্তা থেকে স্ত্রীলোকদের বঞ্চিত করবার অশুভ মানসিকতাই অভিব্যক্ত করবেন মাত্র ।

=প্রশ্নঃ – চাণক্য পন্ডিত বলেছিলেন, স্ত্রীলোকেরা সাধারণত অল্পবুদ্ধিসম্পন্না, তাই তারা নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত হতে পারে না – একথা কি আজও প্রযোজ্য ?

উত্তরঃ – প্রবীণ মানুষেরা আজও বলে থাকেন, ‘স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম্ দেবা ন জানন্তি’ । কথাটি শুনে আধুনিক নারীসমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতেই পারে, কারন এখন মহিলারা আধুনিক কেতাবী শিক্ষাচর্চায় অগ্রসর হয়ে আত্মসন্মান বোধ অর্জন করেছেন—তাঁরা এই ধরনের মন্তব্যে প্রতক্ষ্যভাবে প্রতিবাদ জানাতেই পারেন । তবে গীতার অভিব্যক্তিকে মর্যাদা দিয়ে নারীর ৬ টি ভয়াবহ দোষের কথা প্রবীন নারী-পুরুষ সকলেই স্বীকার করে থাকেন – এই দোষগুলি প্রশ্রয় দিলে যে কোনও নারীর চরিত্র দুর্বোধ্য হয়ে উঠতে বাধ্য । তাই গীতার দশম অধ্যায়ে ‘বিভূতিযোগ’ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নারীর সাতটি গুণমর্যাদা বিকাশের শুভ পরামর্শও দিয়েছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, যাতে প্রত্যেক নারীর মধ্যেই শ্রীভগবানের ঐশ্বর্যগুণ বিকশিত হয়ে সকল প্রকার দোষের সম্ভাব্য প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যেতে পারে ।

=প্রশ্নঃ – গীতায় নারীর ঐশ্বর্যগুণ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ কি বলেছেন ?

উত্তরঃ – গীতার ১০ম অধ্যায়ে ‘বিভূতিযোগ’ আলোচনা প্রসঙ্গে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর নিজের ঐশ্বর্যগুণাবলীর বিশদ বর্ণনা প্রসঙ্গে ৩৪ নং শ্লোকে স্পষ্টই বলেছেন –

কীর্তি শ্রীর্বাক্ চ নারীণাং স্মৃতির্মেধা ধৃতিঃ ক্ষমা ।

অর্থাৎ, ‘নারীদের মধ্যে আমি কীর্তি, শ্রী, কাম, স্মৃতি, মেধা, ধৃতি এবং ক্ষমা – এই সকল গুণাবলীর মাধ্যমে আমার ঐশ্বরিক মর্যাদা নিহিত রেখেছি ।’ তাই লক্ষ করলে দেখা যাবে, সমাজে যে কোনও সময়ে যখনই কোনও মহিলা যশস্বিনী হয়ে ওঠেন, তাঁর মধ্যে এই সব ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যগুণ ফুটে ওঠে ।

=প্রশ্নঃ – নারীর মধ্যে যে ৬ টি দোষের কথা নিয়ে অর্জুন আমাদের চিন্তান্বিত করেছেন, সেই দুশ্চিন্তা দূর করবার জন্যেই কি শ্রীকৃষ্ণ নারীর ৭ টি গুণের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ?

উত্তরঃ – শুধু মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাই ন – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় ঘোষনা করেছেন যে, ঐ ৭ টি গুণ তাঁর নিজেরই ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রতিফলন । গুণগুলি সবই স্ত্রীলিঙ্গবাচক । কোনও স্ত্রীলোক যখন এই ঐশ্বর্যমন্ডিত গুণাবলীর সবগুলি কিংবা কয়েকটির অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে বিভূষিতা করে তুলতে উদ্যোগী হন, তখনই তিনি সমাজে মহিমান্বিতা হয়ে উঠেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই ।

প্রথম ঐশ্বর্যগুণটি হল ‘কীর্তি’ – কৃতিত্বের পরিচায়ক কার্যকলাপ;
দ্বিতীয় গুণটি ‘শ্রী’ – সৌন্দর্য, শোভনীয় আচরণভঙ্গী;
তৃতীয় গুণ – সংযত কথাবার্তা;
চতুর্থ গুণ ‘স্মৃতি’ – স্মরণশক্তি;
পঞ্চম গুণ ‘মেধা’ – পরিশীলিত বুদ্ধি;
ষষ্ঠ গুণ ‘ধৃতি’ – ধৈর্য, সন্তুষ্টি আর অধ্যবসায়; এবং
সপ্তম গুণ ‘ক্ষমা’ – সহিষ্ণুতা, অপরাধমার্জনা ।

এবার, বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখলেই বোঝা যাবে যে, সমাজে যে সব নারী সকলের কাছে মর্যাদা অর্জন করতে পারেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই এই সমস্ত ঐশ্বর্যগুণই অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিকশিত হয়ে উঠেছে । সুতরাং, নারীজাতি সম্পর্কে অর্জুন যে সমস্ত ভীতিপ্রদ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন, পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে এইভাবে নারীর ঐশ্বরিক গুনাবলীর সম্ভবনা বিকশিত করে তোলার পরামর্শ দিয়ে আমাদের সকলকেই আশ্বস্ত করেছেন । এই বিষয়ে অবশ্যই আরও বিশদ আলোচনা পর্যালোচনার অবকাশ আছে । তাতে নারীসমাজ উপকৃত হবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস ।

শাঁখা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহামূল্যবান কেন?

শাঁখা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহামূল্যবান। শাঁখা ছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে অসম্ভব। শাঁখা হচ্ছে শঙ্খ দিয়ে তৈরি এক ধরনের সাদা অলঙ্কার।

পুরাণে আছে, শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী ছিলেন ভগবান নারায়ণে বিশ্বাসী এক সতীসাধ্বী নারী। আর শঙ্খাসুর ছিল ভগবানবিমুখ অত্যাচারী। তার (শঙ্খাসুর) পাপের শাস্তিস্বরূপ তাকে বধ করার পর ভারত মহাসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীব্রতী তুলসী দেবী তা সইতে না পেরে স্বামী এবং নিজের অমরত্বের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন। ভগবান প্রার্থনা মঞ্জুর করে তার দেহ থেকে তুলসী গাছ এবং সমুদ্রে হত্যা করা স্বামীর রক্ত বা অস্থি থেকে শঙ্খ বা শাঁখার উৎপত্তি করেন। তুলসী দেবীর ধর্মপরায়ণতায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান দু'জনকেই ধর্মীয় কাজে নির্ধারণ করে দেন। সেই থেকে পতিব্রতা তুলসীকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তুলসী ও শাঁখা ব্যবহারের প্রচলন হয়। ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে (মহাভারতের যুগে) শাঁখা ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে।

তা ছাড়া সনাতনদের পূজা-অর্চনা, সামাজিক, মাঙ্গলিকসহ যে কোনো শুভ অনুষ্ঠান শঙ্খের ধ্বনি ছাড়া হয় না বললেই চলে।
শঙ্খধ্বনি ছাড়া যে কোনো পূজাই অসমাপ্ত। শঙ্খধ্বনি আমাদের কাছে পবিত্র। শঙ্খ দর্শনে পাপ ক্ষয় হয়। সে জন্য পূজায় সন্ধ্যার সময় বিয়েতে অথবা যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুভ পরিণতির জন্য শঙ্খ বাজানো হয়ে থাকে। শঙ্খ অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক। কখনও পূজা-পার্বণের ধ্বনিতে কখনও শ্রীকৃষ্ণের রণবাদ্য আবার কখনও নারায়ণের হাতের পরশে কখনও বা সাবিত্রীর সতীত্ব বলয়ে।

শঙ্খ হিন্দু রমণীর সতীত্বের প্রতীক। বিবাহিত হিন্দু রমণীর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজোড়া শাঁখা। কারণ কুমারী অবস্থায় শাঁখা পরা যায় না। তাই সে গুনতে থাকে প্রহর কখন তার হাতে উঠবে বিয়ের প্রতীক হিসেবে একজোড়া শঙ্খবালা। তাদের ধারণা, এ শঙ্খবালা যতদিন হাতে থাকবে ততদিন তার স্বামী সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবে। তাদের বিশ্বাস, হাত শাঁখাহীন থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
তবে শঙ্খ শুধু বিবাহিত ও হিন্দু রমণীর হাতের শোভা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় ধর্ম ও বিশ্বাসের আধার হিসেবে। দেবতার পূজায় শঙ্খে কপিলা গাভীর দুধ ভরে নারায়ণকে স্নান করানো হয়। বলা হয়, শঙ্খধ্বনি যতদূর পর্যন্ত যায় ততদূর পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবী অবস্থান করেন। শঙ্খ কূটরস পুষ্টিবর্ধক, বলকারক। শূলকফ-শ্বাস-বিষ দোষনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুখের যে কোনো দাগ মোচন করে শঙ্খ চুন।

সাধারণত শঙ্খ পাওয়া যায় ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে। আরব সাগরেও কিছু প্রাপ্তি ঘটে। প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে শঙ্খের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। বিভিন্ন জাতের শঙ্খ রয়েছে। এদের মধ্যে উন্নতমানের হচ্ছে কন্যা কুমারী, রামেশ্বরী, কেপি, জাজি, পাটি, মতি সালামত, ওমেনি, দোয়ালি, সারভি কি, তিতকুটি, ধলা ইত্যাদি। 'মতি সালামত' সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এর মধ্যে মুক্তা পাওয়া যায়। শঙ্খের মুখ, লেজ ও পিঠ আছে। সাধারণত বাম দিকে শঙ্খের মুখ থাকে। যদি শঙ্খের মুখ ডান দিকে থাকে তবে তার মূল্য অনেক। এটাকে নারায়ণের হাতের শঙ্খের অনুরূপ মনে করা হয়। এ দক্ষিণমুখী শঙ্খকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ শঙ্খ দিয়ে পূজা করলে ঘরে সৌভাগ্য আসে, বিপদ-আপদ দূর হয়। শঙ্খ একটি প্রাচীন শিল্প। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা আবিষ্কারের সময় শঙ্খশিল্পের বিভিন্ন কারুকাজের নিদর্শন পাওয়া যায়।

দুর্গাপূজার অন্যতম অনুষঙ্গ শঙ্খ। পুরোহিতের মন্ত্র, ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি_ এই শব্দগুলো সনাতন পূজা মণ্ডপের পরিচিত অনুষঙ্গ। এগুলো ছাড়া পূজাই হয় না ।

আমরা কেন মূর্তি পূজা করি?

বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা মূর্তি বা বিগ্রহকে পূজা করলে ও প্রকৃতপক্ষে আমরা ভগবানের পূজা করি। বড় কিছু বুঝানোর জন্য তথা অদৃশ্য এবং অব্যক্ত সৃষ্টিকর্তাকে কল্পনার জন্য প্রতীক বা মূর্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রতীকের মাধ্যমে আমাদের আসল শক্তির কথা মনে পড়ে এবং তখনই আমরা ভগবানকে স্মরণ করি।

আগে একটি কাহিনী শুনুন , রামানুজাচার্যের বেদান্ত ব্যাখা শুনে আকৃষ্ট হয়ে একজন শিষ্যত্ব গ্রহন করে , শিষ্য বেদান্ত বিশ্বাসী, ভগবানের মূর্তিতে তার আস্থা ছিল না । গুরু যে বিগ্রহের পূজা করতেন তা খুব ভালো চোখে নিতে পারতেন না । তার ধারনা মূর্তি পূজা নিম্ন অধিকারীর জন্য । রামানুজ তার মনোভাব বুঝেও কিছু বলতেন না । একদিন আশ্রমে আগুন নাই। শিষ্যটিকে বললেন একটু আগুন নিয়ে আসতে। শিষ্য জলন্ত উনুন হতে কিছু কাঠ নিয়ে এলেন। গুরু বললেন-পোড়া কাঠ আনতে বলিনি। আগুন চাই। শিষ্য বুঝে উঠতে পারছেন না , কাঠ ছাড়া কিভাবে আগুন নিয়ে আসবেন।রামানুজ তখন বললেন, সামান্য আগুন আনতে অবলম্বন দরকার হচ্ছে।আর যিনি বিশ্বেশ্বর , তাকে কিনা পাওয়া যাবে বিনা অবলম্বনে? এ বিগ্রহই সে অবলম্বন, ভক্তিযুক্
ত চিত্তে সেবা পূজা করলে তিনি এর মধ্যে আর্বিভূত হবেন ।তখন এ বিগ্রহই অর্চাবতার ।

সনাতন ধর্মে নিরাকার উচ্চ স্তরের উপাসনা যা এই কলিযুগে প্রায় অসম্ভব ।কলিযুগে সাধারন মনোনিবেশ তথা চিত্তকে বিষয় বাসনা থেকে সরিয়ে একাগ্রচিত্তে ভগবানকে স্মরণ করার জন্য মূর্তি একটি বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ।

গীতার নবম অধ্যায়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন যে, অব্যক্ত উপাসনা দেহাভিমানী জীবের পক্ষে সম্ভবপর নয় বলে ব্যক্ত।

তাই মূর্তি পূজা বা বিগ্রহ পূজার মাধ্যমে অব্যক্ত উপাসনা করা সম্ভব ।

সর্বশেষ কথা, আমাদের আদিধর্ম গ্রন্থ বেদে নিরাকার উপাসনার কথা বলা হয়েছে । কিন্তু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগের জীবদের উদ্দেশ্য শ্রীমদ্ভাগবদ্‌গীতায় বলেছেন যে , দেহভিমানী জীবের পক্ষে নিরাকার উপাসনা সম্ভব নয় । তাই আমরা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে ভগবানের আরাধনা করি ।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা মূর্তি বা বিগ্রহকে পূজা করলে ও প্রকৃতপক্ষে আমরা ভগবানের পূজা করি। বড় কিছু বুঝানোর জন্য তথা অদৃশ্য এবং অব্যক্ত সৃষ্টিকর্তাকে কল্পনার জন্য প্রতীক বা মূর্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রতীকের মাধ্যমে আমাদের আসল শক্তির কথা মনে পড়ে এবং তখনই আমরা ভগবানকে স্মরণ করি।

আগে একটি কাহিনী শুনুন , রামানুজাচার্যের বেদান্ত ব্যাখা শুনে আকৃষ্ট হয়ে একজন শিষ্যত্ব গ্রহন করে , শিষ্য বেদান্ত বিশ্বাসী, ভগবানের মূর্তিতে তার আস্থা ছিল না । গুরু যে বিগ্রহের পূজা করতেন তা খুব ভালো চোখে নিতে পারতেন না । তার ধারনা মূর্তি পূজা নিম্ন অধিকারীর জন্য । রামানুজ তার মনোভাব বুঝেও কিছু বলতেন না । একদিন আশ্রমে আগুন নাই। শিষ্যটিকে বললেন একটু আগুন নিয়ে আসতে। শিষ্য জলন্ত উনুন হতে কিছু কাঠ নিয়ে এলেন। গুরু বললেন-পোড়া কাঠ আনতে বলিনি। আগুন চাই। শিষ্য বুঝে উঠতে পারছেন না , কাঠ ছাড়া কিভাবে আগুন নিয়ে আসবেন।রামানুজ তখন বললেন, সামান্য আগুন আনতে অবলম্বন দরকার হচ্ছে।আর যিনি বিশ্বেশ্বর , তাকে কিনা পাওয়া যাবে বিনা অবলম্বনে? এ বিগ্রহই সে অবলম্বন, ভক্তিযুক্
ত চিত্তে সেবা পূজা করলে তিনি এর মধ্যে আর্বিভূত হবেন ।তখন এ বিগ্রহই অর্চাবতার ।

সনাতন ধর্মে নিরাকার উচ্চ স্তরের উপাসনা যা এই কলিযুগে প্রায় অসম্ভব ।কলিযুগে সাধারন মনোনিবেশ তথা চিত্তকে বিষয় বাসনা থেকে সরিয়ে একাগ্রচিত্তে ভগবানকে স্মরণ করার জন্য মূর্তি একটি বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ।

গীতার নবম অধ্যায়ে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন যে, অব্যক্ত উপাসনা দেহাভিমানী জীবের পক্ষে সম্ভবপর নয় বলে ব্যক্ত।

তাই মূর্তি পূজা বা বিগ্রহ পূজার মাধ্যমে অব্যক্ত উপাসনা করা সম্ভব ।

সর্বশেষ কথা, আমাদের আদিধর্ম গ্রন্থ বেদে নিরাকার উপাসনার কথা বলা হয়েছে । কিন্তু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগের জীবদের উদ্দেশ্য শ্রীমদ্ভাগবদ্‌গীতায় বলেছেন যে , দেহভিমানী জীবের পক্ষে নিরাকার উপাসনা সম্ভব নয় । তাই আমরা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে ভগবানের আরাধনা করি ।
 

হলিউডের দ্যা ম্যাট্রিক্স মুভিতে সংস্কৃত

হলিউডের সারা জাগানো মুভি দ্যা ম্যাট্রিক্স (The Matrix) একটি আলোচিত মুভি। বিশেষতঃ যারা হলিউডের মুভি দেখতে অভ্যস্থ তারা অন্তত এ The Matrix ফিল্মটি একবার হলেও দেখেছে। মূলত এটি অ্যাকশন ধর্মী আর উচ্চতর টেকনোলজী ব্যবহার করায় এ ছবিটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। ভায়োলেন্সধর্মী এ্যাকশনের বৈচিত্র্যতা ও ভিন্নধর্মী গল্পের কারণেই এ জনপ্রিয়তা। কিন্তু সাড়া জাগানো এ মুভিটির একটি বিশেষ আর্কষণ রয়েছে মূলত একটি ভিন্ন কারণে। তা হল, এই মুভির একটি বিশেষ মূহুর্তে সংস্কৃতের ব্যবহার। মুভিটির পরিচালক ল্যারি এবং অ্যান্ডি ম্যাকোস্কি একদম শেষ পর্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করেন।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এ সংস্কৃত শ্লোকসমূহ উপনিষদ থেকে নেয়া। উপনিষদের বৃহদারণ্যক (১.৩.২৮) থেকে সংগৃহিত এ শ্লোকটি মূলত একটি প্রার্থনামূলক --

‘আমার অজ্ঞানতা থেকে পরম সত্যের দিকে পরিচালনা করুন, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। মৃত্যু থেকে অমর হওয়ার জন্য আমাকে পরিচালিত করুন।’

শুধুমাত্র ঐ সংস্কৃত শ্লোকটিই নয়, ঈশোপনিষদ, মুণ্ডক উপনিষদ এবং কঠ উপনিষদ থেকেও সংগৃহিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক গাওয়া হয়। আর এ শ্লোকসমূহ সুর দিয়ে গেয়েছেন ব্রিসপিয়ান মাইলস। অনেকেই মুভিটির (The Matrix Revolutions) শেষ মূহুর্তের ঐ গানটিকে জার্মান ভাষায় গাওয়া হয়েছে মনে করলে ভুল করবেন। একটু সূক্ষভাবে শুনলে উপনিষদের শ্লোকগুলো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন।

তাছাড়া আরেকটি সুখবর হল উইলিয়াম ব্লেকের একটি কবিতায়ও কোরাল হিসেবে ‘ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়’ শ্লোকটি অর্ন্তভূক্তি পেয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে হলিউডে এসব শ্লোকগুলির অনুবাদ সম্বলিত সুযোগ-সুবিধাসমূহ তারা পেয়েছিল মূলত এ.সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের ইংরেজী সংস্করণ উপনিষদ থেকে। পাশ্চাত্যবাসীদের এ উপনিষদ পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ইংরেজীতে তাৎপর্য সম্বলিত উপনিষদসমূহ প্রকাশ করেছিলেন। তারই কৃপায়, এখন হলিউডে এ পবিত্র শ্লোকসমূহকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। দি ম্যাট্রিক্স এ ছবির বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে এবং অ্যাজেন্ট স্মিথ এর মধ্যকার শেষ পর্যায়ের যুদ্ধের সময় এই গান গাওয়া হয়।

সুতরাং, পৃথিবীর ১ম ভাষা সংস্কৃত আজ শুধু হলিউড কেন বিশ্বের অনেক দেশেই অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে ব্যবহার করা হচ্ছে যা সত্যিই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য গর্বের বিষয়।

(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জুলাই’০৯ সংখ্যা, আর্কাইভস থেকে)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রী শ্রী রাধামাধব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশে এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় মন্দিরে সাবেক ছাত্রদের প্রচেষ্ঠায় শ্রী শ্রী রাধামাধব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হল। এটি ছিল বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এইটি বাংলাদেশের সনাতন সমাজের জন্য এক অসাধারণ ঘটনা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা এবং শ্রী শ্রী রাধামাধব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় এই বছর জন্মাষ্টমীতে।

গত জন্মাষ্ঠমী ও একই সাথে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে সেই দিন সকালে সং
র্কীতন সহকারে শোভাযাত্রা, কৃষ্ণপূজা, পুষ্পাঞ্জলী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ও বর্তমান পূজারী আশুতোষ দাসের শ্রীমদ্ভগবদগীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। ‘Krishna is History: Not a myth’ বিষয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক স্লাইড শো পরিবেশন করেন ফার্মেসী বিভাগের ছাত্র গৌতম সরকার। এরপর প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং কেন্দ্রিয় পূজা উদ্যাপন পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর আহবায়ক ড. কমল কৃষ্ণ বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন রা.বি উপ-উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ নুরুল্লাহ, প্রফেসর এম. আব্দুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ রা.বি জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর চিত্তরঞ্জন মিশ্র, প্রফেসর মো. তোফাজ্জল হোসেন তরফদার, ফলিত রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র লালন কুমার সূত্রধর।

আলোচকবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মদন মোহন দে- হিসাব ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ, রা.বি; শংকর মজুমদার (সর্বেশ্বর গোবিন্দ দাস), সহযোগী অধ্যাপক, কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড. মুক্তিদায়ী নিতাই দাস ব্রহ্মচারী-শ্রী শ্রী রূপ সনাতন স্মৃতিতীর্থ, যশোর। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন ফার্মেসী বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র নিতীশ কুমার এবং পৌরহিত্য করেন রামেশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী-অধ্যক্ষ, ইস্কন রাজশাহী। বিকালে গীতা পাঠ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ও রাত্রে পরম সুস্বাধু প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

কৃতজ্ঞতায় : শুভ চন্দ্র দে, চৈতন্য সন্দেশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
উৎস: মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, অক্টোবর ২০১২ সংখ্যা

তুলসী গাছ কেন সনাতনধর্মাবলম্বীদের কাছে এত পবিত্র ? / হিন্দু বাড়িতে তুলসী গাছ থাকে কেন ?

তুলসী (Tulsi/Holy Basil/ thai Krapho) একটি Lamiaceae family এর অন্তর্গত সুগন্ধি বীরুত্‍ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum sanctum (sanctum অর্থ পবিত্র স্থান) । হাজার হাজার বছর ধরে সাধারণত কৃষ্ণ ও রাধা তুলসী এই দুই প্রকারে প্রাপ্ত তুলসী হিন্দু গৃহে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়ে আসছে যেহেতু এর পিছনে রয়েছে ধর্মীয় ,পরিবেশগত ও বৈজ্ঞানিক কারণ ।

ধর্মীয় কারণ :ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসীকে সীতাস্বরূপা ,স্কন্দপুরাণে লক্ষীস্বরূপা,চর্কসংহিতায় বিষ্ণুর ন্যায় ভুমি,পরিবেশ ও আমাদের রক্ষাকারী বলে বিষ্ণুপ্রিয়া ,ঋকবেদে কল্যাণী বলা হয়েছে । স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু তুলসী দেবীকে পবিত্রা বৃন্দা বলে আখ্যায়িত করে এর সেবা করতে বলেছেন।

পরিবেশগত কারণ : পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তুলসীগাছ একমাত্র উদ্ভিদ যা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে যেখানে অন্য যেকোন গাছ রাত্রিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে তাই রাতের বেলাতে তুলসীতলায় শয়ন করাও ব্যক্তির জন্য উপকারী।এছাড়া তুলসীগাছ ভুমি ক্ষয় রোধক এবং তুলসী গাছ লাগালে তা মশা কীটপতঙ্গ ও সাপ থেকে দূরে রাখে।

বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত কারণ:

*তুলসীতেEugenolঅধিক পরিমাণে থাকায় তা Cox-2 Inhibitorরূপে কাজ করে বলে তা ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
*Hypoglycemic drugs এর সাথে তুলসী খেলে তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
*তেজস্ক্রিয়তার ফেলে ক্ষতিগ্রস্থ কোষসমুহকে মেরামত করে।
*চর্বিজনিত হৃদরোগে এন্টি অক্সিডেন্টের ভুমিকা পালন করে।
*তুলসী একশেরও বেশি Phytochemicals(যেমন oleanolic acid ,beta caryophyllene ইত্যাদি)বহন করে বলে ক্যান্সার চিকিত্‍সায় ব্যবহৃত হয়।
*তুলসীর অ্যালকোহলিক নির্যাস Immune system এর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
*তুলসী স্নায়ুটনিক ও স্মৃতিবর্ধক।
*শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্নরোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ,হাঁপানি প্রভৃতি রোগের নিরাময়ক।
*সর্দি ,কাশি, জ্বর, বমি, ডায়ারিয়া ,কলেরা ,কিডনির পাথর ,মুখের আলসারসহ চোখের বিভিন্ন রোগে ইহা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
*দাঁতের রোগে উপশমকারী বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

শুভ নন্দ চৌধুরী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
কুষ্টিয়া-বাংলাদেশ

হিন্দু মা-বাবারা তাদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দিন।

হিন্দু মা-বাবারা তাদের সন্তানদের শুধু একাডেমিক শিক্ষা প্রদান করেন। ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে একেবারেই ভাবেন না। হ্যা, একাডেমিক শিক্ষার অবশ্যই দরকার আছে। একাডেমিক শিক্ষা তাদের ছেলে-মেয়েকে একটা ভাল চাকরী দিতে পারবে, ডাক্তার বানাবে, ইঞ্জিনিয়ার বানাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়ার ফলে ... তারা নিজ ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে না, সহজেই অসৎ লোকদের দ্বারা ভুল পথে চালিত হয় এবং মেয়ে গুলো হয় ধর্মান্তরিত। তখন ... মা-বাবা-কে বাকী জীবনটা চোখের জল ফেলে ফেলে কাটিয়ে দিতে হয়।

রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১২

যশোরে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের মানববন্ধন

পটিয়ায় বৌদ্ধবিহার ও হিন্দুমন্দিরে ভাঙচুর

কাগজ সংবাদ॥ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সরকারি এমএম কলেজ সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় যশোর প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনকালে শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে ও বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও প্লাকার্ড হাতে নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের উপদেষ্টা অনিক দাস, আহ্বায়ক মিন্টু ভদ্র, সদস্য সচিব আশীষ বিশ্বাস, সদস্য শ্যামল দেবনাথ প্রমুখ।

বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১২

যশোরে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের মানববন্ধন



যশোরে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের মানববন্ধন
                       

কাগজ সংবাদচট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সরকারি এমএম কলেজ সনাতন বিদ্যার্থী সংসদবুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় যশোর প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়
মানববন্ধনকালে শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে ও বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও প্লাকার্ড হাতে নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের উপদেষ্টা অনিক দাস, আহ্বায়ক মিন্টু ভদ্র, সদস্য সচিব আশীষ বিশ্বাস, সদস্য শ্যামল দেবনাথ প্রমুখ