শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২

চলে গেলেন বাল ঠাকরে

চলে গেলেন বাল ঠাকরে৷ রেখে গেলেন এক বর্ণময় অধ্যায়। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে শিবসেনা প্রধানের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর৷আজ দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিত্সক
জলিল পার্কার৷ ঠাকরের মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মুম্বইজুড়ে৷ মাতুশ্রীর সামনে মানুষের ঢল দেখা গিয়েছে৷ ঠাকরেকে শেষ দেখা দেখতে আসছেন অসংখ্য মানুষ৷ আসছেন দলীয় নেতা-কর্মীরাও৷ কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছে মাতুশ্রীকে৷ মুম্বইয়ের থানা গুলিতেও হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে৷



সাধারণ মানুষের মতোই জীবন শুরু হয়েছিল বাল ঠাকরের৷ প্রথমে কার্টুনিস্ট৷ তারপর সেই কার্টুনিস্ট বালাসাহেব ঠাকরেই ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন তামাম বাণিজ্যনগরীর সম্রাট বাল ঠাকরে৷
মুম্বইয়ের একটি ইংরেজি দৈনিকের কার্টুনিস্ট হিসেবে জীবনটা শুরু করেছিলেন বালাসাহেব৷ ১৯৬০-এ নিজেই একটি রাজনৈতিক মুখপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলেন৷ আগের চাকরি ছেড়ে প্রকাশ করলেন ‘মার্মিক’ নামে সাপ্তাহিক রাজনৈতিক পত্রিকা৷ লক্ষ্য তাঁর একটাই, মারাঠি ভাষাভাষীদের জন্য নিজস্ব প্রদেশ৷ সংযুক্ত মহারাষ্ট্র৷ প্রথম থেকেই মুম্বইয়ে ভিনরাজ্যের অধিবাসীদের অস্তিত্বের প্রতিবাদ করে ক্রমশ ভিত বাড়াচ্ছিলেন বালাসাহেব ঠাকরে নামে এক অচেনা ব্যক্তি, তখনও পর্যন্ত৷ বাড়ছিল পরিচিতি৷
১৯৬৬-তে ঠিক করেন নিজেই একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করবেন৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷ তৈরি হল শিবসেনা৷ মহারাষ্ট্রে মারাঠিদের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে, এটাই ছিল শিবসেনার স্লোগান৷ আর তাতেই বাজিমাত৷ হু-হু করে বাড়তে থাকে বালাসাহেব ঠাকরের জনপ্রিয়তা৷ পাশাপাশি উঠতে থাকে অভিযোগ৷ মুম্বইয়ে বসবাস শান্তিপূর্ণ রাখতে বালাসাহেবের দলবল নাকি তোলা তুলছেন ভিনরাজ্যের অধিবাসীদের কাছ থেকে৷ শিবসেনার পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও, শিবসৈনিকদের বিরুদ্ধে গা-জোয়ারির একটা নালিশ ততদিনে পায়ের তলায় মাটি পেয়ে গেছে৷ সমঝে চলাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন সাধারণ মানুষ৷ তাতে প্রকারান্তরে সুবিধাই হয়েছে শিবসেনার৷
ইস্পাতকঠিন বর্মের আড়ালে থাকা বাল কেশব ঠাকরেকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল ৯৬-তে ঘটা জোড়া দুর্ঘটনা৷ প্রথমটিতে মারা যান তাঁর পত্নী মিনা৷ দ্বিতীয়টিতে বড় ছেলে বিন্দুমাধব৷ তিন বছর পর পাঁচ বছরের জন্য বালাসাহেবের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন৷ তাতে অবশ্য বিন্দুমাত্র দমানো যায়নি ঠাকরেকে৷
আজীবন ছিলেন বর্ণময়৷ প্রশ্নহীন আনুগত্য পেয়েছেন লাখো অনুগামীদের কাছ থেকে৷

শেষের দিনেও সেই আনুগত্যই তাঁর বাসভবন মাতুশ্রীর সামনে টেনে আনলো হাজারো শিবসৈনিককে৷ আগাগোড়া বিতর্কিত হয়েও, প্রবল জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্বকে হারাল ১৭ নভেম্বর, দু’হাজার বারোর মুম্বই৷
 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন