বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

হলিউডের দ্যা ম্যাট্রিক্স মুভিতে সংস্কৃত

হলিউডের সারা জাগানো মুভি দ্যা ম্যাট্রিক্স (The Matrix) একটি আলোচিত মুভি। বিশেষতঃ যারা হলিউডের মুভি দেখতে অভ্যস্থ তারা অন্তত এ The Matrix ফিল্মটি একবার হলেও দেখেছে। মূলত এটি অ্যাকশন ধর্মী আর উচ্চতর টেকনোলজী ব্যবহার করায় এ ছবিটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। ভায়োলেন্সধর্মী এ্যাকশনের বৈচিত্র্যতা ও ভিন্নধর্মী গল্পের কারণেই এ জনপ্রিয়তা। কিন্তু সাড়া জাগানো এ মুভিটির একটি বিশেষ আর্কষণ রয়েছে মূলত একটি ভিন্ন কারণে। তা হল, এই মুভির একটি বিশেষ মূহুর্তে সংস্কৃতের ব্যবহার। মুভিটির পরিচালক ল্যারি এবং অ্যান্ডি ম্যাকোস্কি একদম শেষ পর্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করেন।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এ সংস্কৃত শ্লোকসমূহ উপনিষদ থেকে নেয়া। উপনিষদের বৃহদারণ্যক (১.৩.২৮) থেকে সংগৃহিত এ শ্লোকটি মূলত একটি প্রার্থনামূলক --

‘আমার অজ্ঞানতা থেকে পরম সত্যের দিকে পরিচালনা করুন, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। মৃত্যু থেকে অমর হওয়ার জন্য আমাকে পরিচালিত করুন।’

শুধুমাত্র ঐ সংস্কৃত শ্লোকটিই নয়, ঈশোপনিষদ, মুণ্ডক উপনিষদ এবং কঠ উপনিষদ থেকেও সংগৃহিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক গাওয়া হয়। আর এ শ্লোকসমূহ সুর দিয়ে গেয়েছেন ব্রিসপিয়ান মাইলস। অনেকেই মুভিটির (The Matrix Revolutions) শেষ মূহুর্তের ঐ গানটিকে জার্মান ভাষায় গাওয়া হয়েছে মনে করলে ভুল করবেন। একটু সূক্ষভাবে শুনলে উপনিষদের শ্লোকগুলো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন।

তাছাড়া আরেকটি সুখবর হল উইলিয়াম ব্লেকের একটি কবিতায়ও কোরাল হিসেবে ‘ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়’ শ্লোকটি অর্ন্তভূক্তি পেয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে হলিউডে এসব শ্লোকগুলির অনুবাদ সম্বলিত সুযোগ-সুবিধাসমূহ তারা পেয়েছিল মূলত এ.সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের ইংরেজী সংস্করণ উপনিষদ থেকে। পাশ্চাত্যবাসীদের এ উপনিষদ পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ইংরেজীতে তাৎপর্য সম্বলিত উপনিষদসমূহ প্রকাশ করেছিলেন। তারই কৃপায়, এখন হলিউডে এ পবিত্র শ্লোকসমূহকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। দি ম্যাট্রিক্স এ ছবির বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে এবং অ্যাজেন্ট স্মিথ এর মধ্যকার শেষ পর্যায়ের যুদ্ধের সময় এই গান গাওয়া হয়।

সুতরাং, পৃথিবীর ১ম ভাষা সংস্কৃত আজ শুধু হলিউড কেন বিশ্বের অনেক দেশেই অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে ব্যবহার করা হচ্ছে যা সত্যিই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য গর্বের বিষয়।

(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জুলাই’০৯ সংখ্যা, আর্কাইভস থেকে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন