অলৌকিকত্ব বা রূপকথা (মিথ)ঃ
অলৌকিকত্ব বা রূপকথা হলো ধর্মের তৃতীয় গুরুত্ব পূর্ণ উপাদান। মানুষের
ধর্ম বিশ্বাসকে শক্ত পোক্ত করার জন্য দৃশ্যমান প্রতিটি ধর্মের মাঝে এটি
বিদ্যমান। যে সকল মানুষ জ্ঞানী বা বিদ্বান নয়, অথচ তাদের ধর্ম চিন্তার মূলে
হলো বিশ্বাস, এধরনের মানুষ ধর্মের এ উপাদানটুকু ধারণ ও লালন করে ধর্ম
চর্চা করতে পছন্দ করে।
অলৌকিকত্ব বা রূপকথা গুলো বর্তমানে প্রচলিত
সকল ধর্ম ও উপধর্ম গুলোতেই বিদ্যমান। যেমন, হিন্দু ধর্মে পুরানে বর্ণিত
আছে রাস রাজ রাবন রামের স্ত্রী সীতাকে হরন করে পুস্পক রথে আকাশ পথে সমুদ্র
পাড়ি দিয়ে নিজ রাজ্য লংকায় নিয়ে গেছেন, কিংবা রাম সমুদ্রে পাথর ভাসিয়ে সেতু
নির্মান করে সৈন্য নিয়ে লংকায় গিয়ে যুদ্ধ করেছে। মহাভারতে আছে অন্ধ রাজা
ধৃতরাষ্ট্রের রথের সারথী সঞ্চয় রাজা সভায় রাজার পাশে বসে দিব্য দৃষ্টিতে
যুদ্ধ ক্ষেত্রের সমস্ত ঘটনা অবলোকন করে রাজাকে শুনাচ্ছেন। এভাবে খ্রিষ্ট
ধর্মেও আছে ঈশ্বর যীশু কয়েক টুকরা মাছ ও কয়েক খন্ড রুটি দিয়ে কয়েক হাজার
লোককে পেট ভর্তি করে খাইয়েছেন। কিংবা ইসলাম ধর্মে আছে সবে মেরাজের ঘটনা,
যেখানে মহানবী অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক পাখাওয়ালা ঘোড়া নাম বোরাখে (বাস্তবে
এধরনের প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, অতীতে ছিল কি না, সে বিষয়ে কোন তথ্য প্রমান
নেই) ছড়ে করে সপ্তম আসমানে গিয়ে আল্লার সাথে দেখা করে এসেছেন।
এ
অলৌকিকত্ব গুলির কোন কোনটি কখনো কখনো বৈজ্ঞানিক ভাবে সত্য, কিংবা কোন
কোনটি কল্প বিজ্ঞান যা কৌশলটি পরে আবিস্কৃত ও প্রমানিত হয়েছে। তবে কোন কোন
ক্ষেত্রে কোন কোনটি এতটা অতিরঞ্জিত গাঁজাখুরি ভাবে উত্থাপন করা হয়েছে যে,
এটি কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, অথচ ধর্ম বিশ্বাসের কারনে কোন যুক্তি ছাড়াই
বিশ্বাস করতে হচ্ছে। তবে এটি জোর করে বলায় যায়, যে মিথ গুলোতে বৈজ্ঞানিক
সম্ভবনা নাই, এগুলি গাঁজাখুরি গল্প ব্যতীত আর কিছু ভাববার অবকাশ নেই, যেটি
শুধুমাত্র ছড়ানো হয়েছে মানুষে মনে ভীতি সঞ্চার করে মানুষকে নিজ মতবাদ
প্রচার করার জন্য। আমি অন্য ধর্মে বিষয়ে না গিয়ে শুধু মাত্র হিন্দু ধর্মের
কয়েকটি মিথ নিয়ে আলোচনা করব, এখন দেখব এগুলোর বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা ও সত্যতা
কতটুকু ছিল।
হিন্দু ধর্মে অলৌকিকত্ব বা রূপকথা (মিথ)ঃ
অধুনা
হিন্দু ধর্ম পূর্বে পৌরানিক ধর্ম বলা হয় এ জন্যে যে এর অনেক পুরোনো
ইতিহাসের সাথে সাথে বহু পৌরানিক গল্প আছে যেগুলি অলৌকিকত্বে ভরা। যেমন
রামায়নে আছে, রাবন সীতাকে হরন করে পুস্পক রথে করে আকাশ পথে সমুদ্র পাড়ি
দিয়ে লঙ্কায় নিয়ে গেছে। আরো আছে রাম নিজ স্ত্রী সীতা মাকে উদ্ধারের জন্য
পাথর দিয়ে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে পথ তৈরী করেছেন। এগুলো সাদামাটা দৃষ্টিতে
গাঁজাখুরি গল্প মনে হলেও একটু খেয়াল করুন ১৯০০ শতকের প্রথম দিক থেকে কি
মানুষ বিমানের মাধ্যমে আকাশ পথে চলাচল করে না? রাবনের সেই পুস্পক রথকে
আজকের বিমান ভাবলে দেখবেন এটি অযথা কোন মিথ ছিল না। কিংবা আজকের নদী ও
সমুদ্রের উপর বড় বড় বীজ্র গুলোর দিকে তাকালে রামের কার্যটিকে অসাধ্য কিংবা
গাঁজাখুরি ছিল ভাবার দেখার সুযোগ নাই। এছাড়া নাসার ছবিতে ভারত মহাসাগরে এ
ধরনের নিমর্জিত সেতুর অস্তিত্ব সাগর তলে বিদ্যামান। হিন্দুদের মহাভারতের
যুদ্ধের শুরুতে অন্ধ ধৃষ্টরাষ্ট্র যুদ্ধের ঘটনা দেখার জন্য রাজার রথের
সারথী সঞ্জয়কে রাজ প্রাসাদে নিয়োগ করা হয়েছিল, ঋষি ব্যসদেবের আশির্বাদে
সারথী সঞ্জয় রাজপ্রাসাদে বসে কুরুত্রে যুদ্ধ অবলোকন করে সেটির ধারাভাষ্য
বর্ণনা করে অন্ধ রাজাকে শুনিয়েছেন। এ ঘটনাটি মিথ ও হিন্দু পৌরানিক বিশ্বাস,
কিন্তু আজকের ডিজিটাল যুগে আমার কি দেখছি? টেলিভিশন ব্রড কাষ্ট কিংবা
ইন্টারনেট স্কাইপির সাহায্যে কি আমরা ঘরে বসে অনেক দূরের ঘটনা প্রত্যে করছি
না? এভাবে হিন্দু ধর্মের সকল মিথগুলির চির আধুনিক ও কল্প বৈজ্ঞানিক ভিক্তি
খুব শক্ত পোক্তভাবে বিদ্যমান, যে গুলি অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে খুঁেজ
পাওয়া ভার। এভাবে হিন্দু পুরানে প্রতিটি মিথের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। সময়
পেলে হিন্দু পৌরানিক মিথ বনাম বিজ্ঞান, উইপনোলজী নামে কিছু লেখার
প্রত্যাসা করি। **** অরুন চন্দ্র মজুমদার, ঢাকা, ১৩/১০/2012
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন